টমেটো কাদের খাওয়া উচিত নয়
টমেটো খেতে সকলে ভালবাসেন কিন্তু টমেটো কাদের খাওয়া উচিত নয় এ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তবে আপনি যদি জানতে চান কাদের জন্য টমেটো খাওয়া উচিত নয় তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
টমেটো হলো পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি সবজি। কিন্তু তারপরও এটি নির্দিষ্ট কিছু মানুষের জন্যে খাওয়া উপযুক্ত নয়। তাই আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলে টমেটো কাদের জন্য খাওয়া উচিত নয় এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে নিচে আলোচনা করা হলো।
পেজ সূচিপত্র :
- টমেটো কাদের খাওয়া উচিৎ নয়
- টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
- টমেটো খাওয়ার অপকারিতা
- টমেটো খাওয়ার নিয়ম জানুন
- টমেটো খেলে কি ওজন কমে
- লেখকের শেষ মন্তব্য
টমেটো কাদের খাওয়া উচিৎ নয়
টমেটো হলো একটি সহজ লভ্য ও পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। তাই সকলেই সব সময়ই এটি খাবারে তরকারি কিংবা সালাদ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এই টমেটো সবার জন্যে উপকারে নাও আসতে পারে। যদি বেশী পরিমাণে টমেটো খেয়ে থাকেন তাহলে দেখা দিতে পারে নানান ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। তাই চলুন এক নজরে দেখে নিই যে
কাদের উচিত হবে না টমেটো খাওয়া বা কাদের টমেটো খাওয়ার ফলে নানান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। টমেটো খাওয়ার পর মাঝে মধ্যে কিছু মানুষ এর মধ্যে দেখা যায় যে তার কিডনিতে পাথর জনিত সমস্যা হয়েছে৷ এই জন্যে আবার অনেকেই এই সবজি এড়িয়ে চলে থাকে। তারা এটি খায় না, এই ভয়ে যে তাদেরও কিডনি তে পাথর হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
তবে এমন ধারণা নিছকই ভুল। কারণ শুধু মাত্র কিছু সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্যই টমেটো খাওয়ার পর সাধারণত কিডনি তে পাথর এর মতো সমস্যা দেখা দেয়। এমন সমস্যা আপনার নাও হতে পারে। এই ব্যাপারটি যদি একদম পরিষ্কার করে বলি, শুধু মাত্র তাদেরই টমেটো খাওয়া উচিত নয়, যাদের কিডনি তে পাথর হয়। কিংবা যাদের
পারিবারিক ইতিহাসে কিডনিতে পাথর হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। এমন ক্ষেত্রে উক্ত ব্যাক্তির টমেটো খাওয়া উচিত নয়। টমেটো তে অক্সালেট নামক এক রাসায়নিক উপাদান থাকে। যার কারণে মূলত টমেটো খাওয়ার পর কিছু সংবেদনশীল ব্যক্তিদের কিডনি তে পাথর হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
তাই বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আপনি জেনে নিতে পারেন আপনার কিডনি তে অক্সালেট এর জন্যে পাথর হয় কি না। এমন হলে আপনি টমেটো খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন। তবে যদি এমন না হয় তাহলে আপনি টমেটো খেতে পারেন, আপনার কোনো সমস্যা হবে না। আবার অনেক কে দেখা যায়, টমেটো এর উপকারিতা বা
পুষ্টিগুণগুলো দেখে বেশী পরিমাণে টমেটো খাওয়া শুরু করে দেন। এই ব্যাপার গুলো মোটেও ভালো না। টমেটো হলো একটি অম্লীয় খাবার। এর মধ্যে থাকা অম্লের মাত্রা হলো ৪.০০ থেকে ৪.৫০ পর্যন্ত। তাই আপনি যদি বেশী পরিমাণে অর্থাৎ আপনার যতটুকু প্রয়োজন তার থেকে বেশী মাত্রায় খেয়ে থাকেন তাহলে তা আপনার শরীরে পাশ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
আর সে জন্যেই আপনি প্রতিদিন ২ থেকে ৪ টা করে টমেটো খেতে পারবেন এর বেশী নয়। যদি অতিরিক্ত খেয়ে থাকেন তাহলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স এর মতো সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় টমেটো বদ হজমের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই বদহজম এর মতো কোনো সমস্যা থেকে থাকলে কয়েক দিন টমেটো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং
পরে সুস্থ হলে নিয়ম মেনে খেতে পারেন। যাদের অ্যাসিত রিফ্লাক্স এর মতো সমস্যা রয়েছে কিংবা যাদের পাকস্থলী সংবেদনশীল তাদের টমেটো খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ। কেননা এই ধরনের ব্যক্তির জন্যে টমেটোর প্রাকৃতিক অম্লতা অস্বস্তি কিংবা জ্বালা পোড়া তৈরি করতে পারে। এতে থাকা উচ্চ অম্লীয় বৈশিষ্ট্য গ্যাস্টিক এর সমস্যা বাড়াতে পারে।
এটি খাওয়ার পর যদি বদ হজম বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অস্বস্তি এর মতো সমস্যা দেখা দিলে তা খাওয়া কমানো উচিত কিংবা এটি এড়িয়ে চলা উচিত। তবে টমেটোর যদি বীজ ও ভেতরের অংশ ফেলে রান্না করলে তা অ্যাসিডিটি কিছুটা কমাতে সাহায্য করে। কিছু সংবেদনশীল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দেখা যায় এলার্জির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই টমেটো।
তাই তাদের উচিত হবে টমেটো খাওয়া থেকে বিরত থাকা। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় টমেটো খাওয়ার পর এলার্জি এর হালকা লক্ষণ থেকে তা গুরুতর হয়ে গিয়েছে৷ যার ফলে এতে চুলকানি, গাঁটে ব্যাথা, ফোলাভাব বা এমন কি অ্যানাফিলিক্সও দেখা দিতে পারে। তাই আপনার কিংবা আপনার পরিবারের মধ্যে কারো যদি এলার্জি থেকে থাকে তাহলে
তা এড়িয়ে চলতে পারেন। এই ক্ষেত্রে এটি খাওয়া বাদ দিয়ে দিলেই ভালো হয়। আপনি যদি ঔষধ খেয়ে থাকেন, তাহলে টমেটো তে এমন কিছু যৌগ রয়েছে যা ঔষধের সাথে বিক্রিয়া করে ফেলতে পারে। যার ফলে শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে আপনি যদি রক্ত জমাট বাধা বা ওয়ারফারিন এর মতো রক্ত পাতলা নিয়ন্ত্রণ করতে ঔষধ সেবন করে থাকেন তাহলে
তা টমেটোর সঙ্গে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। তাই এমন ঔষধ এর সাথে আপনার উচিত টমেটো একদমই না খাওয়া। টমেটো তে থাকে ভিটামিন কে, যা এই ঔষধ এর সাথে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। আর সে জন্যেই আপনি যদি রক্ত পাতলা করার ঔষধ খেয়ে থাকেন তাহলে তা পরিহার করুন নয়তো বা একজন চিকিৎসক এর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নিন।
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
টমেটো কাদের খাওয়া উচিত নয়? এই সম্পর্কে আশা করি আপনি জেনে গিয়েছেন। টমেটো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যে অনেক উপকার করে থাকে। যার জন্যে আপনি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমাণ মতো টমেটো রাখতে পারেন। এটি আপনার রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস করে থাকে। এটি পোস্ট প্রন্ডিয়াল লিপোমিয়া প্রতিরোধ করতেও সহায়তা করে থাকে।
যার ফলে আমাদের এথেরোস্ক্লেরেসিস এর ঝুঁকি কমে। আবার টমেটো যদি নিয়মিত ভাবে খাওয়া হয় তাহলে ওজনও হ্রাস পায়। তাই যারা ডায়েট করেন তাদের খাবারে টমেটো রাখতে পারেন। টমেটো তে লাইকোপিন, বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও নারিনজেনিন সহ বিভিন্ন অ্যান্টি- অক্সিডেন্টে পূর্ণ থাকে। এই গুলো আমাদের
শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর ফলে যে সমস্যা গুলো হয়ে থাকে সে গুলো থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করে। এতে লুটেইন রয়েছে যা বয়স সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে থাকে। আবার ক্লোরোজেনিক এসিড রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে থাকে। ত্বকে নারিনজেনিন প্রদাহ কমাতে ভুমিকা রাখে এই টমেটো। টমেটো আমাদের
শরীরের ভিটামিন সি এর চাহিদা দৈনিক ২৫ পূরণ করতে পারে। প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটো তে ১৩.৭ মিলি গ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া সম্ভব হয়ে থাকে। ভিটামিন সি হলো একটি অ্যান্টি - অক্সিডেন্ট যা আমাদের ইমিউনো কোষ তৈরি করতে ভুমিকা রাখে। এই কোষের বৃদ্ধি ও পাশাপাশি এটি নিরাময় করতেও সাহায্য করে থাকে। যারা নিরামিষভোজী তারা
প্রাণিজ খাবার থেকে আমিষ পান না। তাই তাদের জন্যে এই ভিটামিন সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি উদ্ভিদ ভিত্তিক যে খাবার গুলো রয়েছে সেখান থেকে আমিষ শোষণ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। টমেটো তে ফাইবার এর উপস্থিতি রয়েছে। এটি মল কে নরম করে থাকে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকলে টমেটো অনেক উপকারে আসে।
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাতে টমেটোর ভুমিকা রয়েছে অনেক। এটি কার্বোহাইড্রেট হজম করে থাকে ও শোষণ কে ধীর গতি সম্পন্ন করে। যার ফলে গ্লুকোজ এর পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরে থাকার অনুভূতি জাগায়। দ্রবণীয় ফাইবার আমাদের অন্ত্রে প্রিবায়োটিক হিসাবে কাজ করে থাকে। এটি হলো এমন এক খাবার যা
অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া কে পুষ্ট করে থাকে। নারী ও পুরুষের খাদ্য তালিকায় যথাক্রমে ২৫ ও ৩৮ গ্রাম ফাইবার রাখা উচিত। যেখানে মাঝারি আকারের একটি টমেটো ১.৫ গ্রাম ফাইবার সরবরাহ করে থাকে। যাতে অদ্রবণীয় ও দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে। টমেটো তে থাকা পটাশিয়াম রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে ভুমিকা রাখে। তাই এই উপাদানগুলো পেতে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন টমেটোকে।
টমেটো খাওয়ার অপকারিতা
আমরা এতোক্ষণ সময় টমেটোর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ গুলো সমন্ধেও জানতে পেরেছি। কিন্তু এই টমেটোর মধ্যে যে কিছু অপকারিতাও রয়েছে এ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। হ্যাঁ, আপনি যদি প্রয়োজন এর তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে টমেটো খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরে এর নানা ধরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
যেমন আপনি যদি অতিরিক্ত টমেটো খান তাহলে পেটে অম্লতা দেখা দিতে পারে। জয়েন্টে ব্যাথা হতে পারে৷ ত্বকে বিবর্ণতা ও অ্যালার্জি সহ আরো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রয়োজনের চাইতে অতিরিক্ত টমেটো খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন এবং নিয়ম মেনে সকল খাবার গ্রহণ করুন তাহলে স্বাস্থ্য সুন্দর ও সুস্থ থাকবে ইনশাআল্লাহ।
টমেটো খাওয়ার নিয়ম জানুন
টমেটো খাওয়ার জন্যে সুনির্দিষ্ট করে নিয়ম করে খাওয়ার দরকার নেই। তবে আপনি এটি স্বাস্থ্য সম্মত ভাবে খেতে পারেন। এটি কে আমরা বিভিন্ন ভাবে খেতে পারি। এটি কে সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায়। আবার আপনি টমেটোর ওমলেট বানিয়েও খেতে পারবেন। টমেটোর জুস ও স্যুপ বানিয়েও খেতে পারবেন
আবার অনেক সময় ভর্তা করেও খাওয়া যায়। টমেটো কিন্তু অনেকেই কাঁচাই খেয়ে থাকেন। তাই রান্না ব্যতীত টমেটো খেলে যদি আপনার কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে খেতে পারেন।
টমেটো খেলে কি ওজন কমে
ওজন কমাতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে থাকে এই টমেটো। তাই দেহের অতিরিক্ত মেদ কমাতে টমেটো খেদে পারেন। কারণ, এর মধ্যে কিছু অ্যামিনো এসিড রয়েছে যে গুলো মেদ ঝরাতে সাহায্য করে থাকে। তাই আপনি যদি ওজন কমাতে চান, তাহলে নির্দ্বিধায় টমেটো খেতে পারেন। এতে ফাইবার রয়েছে যা ওজন কমাতে ভুমিকা রাখে। তাই ডায়েটেও টমেটো রাখতে পারেন।
লেখকের শেষ মন্তব্য
আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলে টমেটো খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা অপকারিতা টমেটো খাওয়ার নিয়ম এবং টমেটো কাদের জন্য খাওয়া উচিত ও কাদের জন্য খাওয়া উচিত নয় তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে আশা করি আপনি এই আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়েছেন এবং বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছেন।
অতএব আর্টিকেলের মধ্যে যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে নিশ্চয় ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং আরো কোন বিষয় জানার থাকলে বা কোন মন্তব্য করা থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে দিয়ে করতে পারেন ধন্যবাদ।
গ্রীনল্যান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url