আপনার কিডনি ভালো আছে কিনা বুঝবেন যেভাবে
আপনি কি কিডনি জনিত সমস্যা নিয়ে খুবই চিন্তিত বা আপনার কিডনি ভালো আছে কিনা তা বুঝতে পারছেন না। তাহলে এখন থেকে আপনার আর কোন চিন্তা নেই। কারণ আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে কিডনি রোগের সকল লক্ষণ
এবং কিডনি ভালো আছে কিনা তা বোঝার সহজ উপায় ও আরো অনেক বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আলোচনা করব। তাই আপনি যদি কিডনি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।
পেজের সূচিপত্রঃ
- কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় সমূহ
- কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয় তা জেনে নিন
- কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো কি কি জানুন
- কিডনি রোগের প্রতিরোধ কিভাবে করবেন
- কিডনি টেস্ট করতে কত টাকা খরচ হয়
- কিডনি টেস্ট নাম লিস্ট
- লেখক এর শেষ মন্তব্য
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় সমূহ
সাধারণত একজন মানুষের শরীরে যেসব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আল্লাহতালা তৈরি করে দিয়েছেন সেগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম এবং সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কিছু না কিছু কাজ রয়েছে। তবে এসব অঙ্গেরর মধ্যে কিছু কিছু অঙ্গের গুরুত্ব এতই বেশি যে সেগুলো ছাড়া মানুষ খুব বেশিদিন বাঁচতে পারে না। এর মধ্যে একটি হল কিডনি। কিডনি মানব জীবনের এমনই একটি
আরো পড়ুনঃগর্ভাবস্থায় কি কি ফল ও সবজি খাওয়া যাবেনা - জেনে নিন
গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা বিকল হয়ে গেলে মানুষের জীবন চলার পথ একদম থমকে যায় এমনকি এর ফলে মৃত্যুও হতে পারে। আজকাল বহু মানুষকে কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে তবে কিডনি রোগের লক্ষণ কারো কারো বোঝা যায় আবার কারো কারো বোঝা যায় না। কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার নানাবিধ কারণ রয়েছে। তবে
দৈনন্দিন খাদ্যভ্যাসের কারণে মানুষ কিডনি রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সাধারণত কিডনি আমাদের শরীরের রক্তকে ছেঁকে পরিশোধন করে এবং শরীরের যে অতিরিক্ত ময়লা ও বর্জ্য পদার্থ রয়েছে সেগুলো কিডনির মাধ্যমে ময়লা পরিত্যাগের স্থান দিয়ে বের করে দেই এর ফলে শরীর সুস্থ থাকে। যদি একটি কিডনি বিকল হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে আপনি
হয়তোবা বেশ কিছুদিন বাঁচতে পারবেন কিন্তু যদি দুটি কিডনিই বিকল বা নষ্ট হয়ে যায় সেক্ষেত্রে যদি কিডনির ট্রান্সফারমেশন অথবা সঠিক চিকিৎসা ও ওষুধের দ্বারায় না সারে তাহলে বেঁচে থাকা একদম অসম্ভব হয়ে যায় এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে মৃত্যু হতে পারে। তবে আপনার ক্ষেত্রে বলি কিডনির সুস্থতা এবং কিডনি রোগের লক্ষণ নিয়ে
আরো পড়ুনঃচোখ ওঠা রোগের লক্ষণ, কারণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা জেনে নিন
আলোচিত আজকের এই আর্টিকেলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি আর্টিকেল যা আপনার অনেক উপকারে আসবে আশা করি। তাই আপনার কিডনি ভালো আছে কিনা তার উপায় সমূহ যদি আপনি জানতে চান তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক
কিডনি ভালো আছে কিনা তা কিভাবে বোঝা যায়। সাধারণত কিডনি সুস্থ আছে কিনা তা জানার জন্য তিন ধরনের টেস্ট করতে হয় যেমন -
- (১) ব্লাড টেস্ট
- (২) ইউরিন টেস্ট
- (৩) কিডনির আল্ট্রাসনোগ্রাফি
(১) ব্লাড টেস্টঃ ব্লাড অর্থাৎ রক্ত পরীক্ষার মধ্যে ইউরিয়া ক্যালসিয়াম ফসফরাস পটাশিয়াম হিমোগ্লোবিনের মাত্রা এবং ভিটামিন ডি লেভেলের মাত্রা পরীক্ষা করে টেস্ট রিপোর্টে যদি ভালো ফলাফল পাওয়া যায় তাহলে আপনি বুঝবেন আপনার কিডনি সুস্থ আছে।
(২) ইউরিন টেস্টঃ এরপর দ্বিতীয় যে টেস্টটি রয়েছে তা হল ইউরিন অর্থাৎ প্রসব পরীক্ষা। মূলত ইউরিন পরীক্ষার মধ্যে দুই ধরনের টেস্ট করা হয় যেমন ইউরিনের রুটিন মাইক্রোস্কোপিক টেস্ট এবং অ্যালবামিন ও ক্রিয়াটেনাইন্ পরীক্ষা। এই পরীক্ষা গুলোর মাধ্যমে যদি বোঝা যায় যে আপনার ইউরিন অর্থাৎ প্রসাব এর মধ্যে কোন
আরো পড়ুনঃকোষ্ঠকাঠিন্য দ্রুত নিরাময় করতে গুরুত্বপুর্ণ ৭টি খাবার
সমস্যা না হলে আপনি বুঝবেন যে আপনার কিডনিটি সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছে। ইউরিন মূলত কিডনির দ্বারা প্রসাব রূপে বের হয়ে আসে তাই প্রসাব পরীক্ষা করলে কিডনি সুস্থ আছে কিনা তা বোঝা যায়।
(৩) কিডনির আল্ট্রাসনোগ্রাফিঃ কিডনির আল্ট্রাসনোগ্রাফি মানে হল কিডনির স্ট্রাকচারটা কেমন আছে অর্থাৎ কিডনির মধ্যে কোন স্পর্ট বা দাগ পড়েছে কিনা কিডনি ড্যামেজ হয়েছে কিনা, কিডনির মধ্যে পাথর জমেছে কিনা তা ছবির মাধ্যমে দেখা যায়। তাই আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে কিডনি লেভেলের ফলাফল যদি ভালো থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি বুঝবেন আপনার কিডনি সুস্থ রয়েছে।
কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয় তা জেনে নিন
কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যদি একটি মানুষের কিডনি বিকল হয়ে যায় তাহলে তাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এমনকি ভারি কোন কিছু ওঠাতে গেলে কিডনি স্থানে প্রচুর ব্যথা করে এক কথায় স্বাভাবিক মানুষের মত চলাফেরা করা আর সম্ভব হয় না। মূলত কিডনির কোন সমস্যা হলে শরীরের বিভিন্ন অংশ ব্যথা করে যেমন কিডনি ড্যামেজ বা কোন ধরনের সমস্যা হলে
আরো পড়ুনঃ৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ - ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায়
কোমরে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়, তলপেটে ব্যথা করে এবং নাভির নিচে ব্যথা করে। তাই কিডনি সুস্থ রাখার জন্য কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ বা কিডনির যেকোনো ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচতে অবশ্যই আমাদের তা থেকে সতর্ক হওয়া উচিত। এবং কিডনি সুস্থ রাখার জন্য যেসব করনীয়তা রয়েছে তা অবশ্যই মেনে চলতে হবে তাহলেই কিডনি সুস্থ থাকবে ইনশাআল্লাহ।
কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো কি কি জানুন
আপনি কি জানেন কিডনি আপনার শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যদি কিডনি না থাকতো তাহলে আপনার শরীরের রক্ত পরিশোধন হতো না যার ফলে রক্ত দূষিত হয়ে যেত এবং শরীরের যে অতিরিক্ত ময়লা ও বর্জ্য পদার্থগুলো রয়েছে তা বের হয়ে আসতে পারতো না। কিডনি কিডনি ড্যামেজ হওয়ার বহু লক্ষণ রয়েছে তবে
কিছু লক্ষণ আমি উল্লেখ করে দিচ্ছি যা জানা থাকলে আপনার বুঝতে সুবিধা হবে আশা করি। নিজেকে কিডনি ড্যামেজ হওয়ার লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হলো। যেমন
- কিডনি বিকল বা নষ্ট হয়ে গেলে মাজায় প্রচন্ড ব্যথা করে সর্ব শরীর ফুলে যায় এবং শরীরে পানি জমে যায় যা বের করতে ডায়ালাইসিস পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়।
- ঘন ঘন প্রসব হয়, প্রসবের রং হলুদ হয়ে যায় এবং প্রসাদ বের হওয়ার স্থান ব্যথায় কিটকিট করে।
- শরীরের রক্তচাপ সব সময় উচ্চ মাত্রায় থাকে
- চেহারার রং ফ্যাকাসে ও হলদে ভাব হয়ে যায়।
- ক্ষুধামন্দা দেখা দেই
- প্রচন্ড মাথা ব্যথা বমি হওয়া চুল পড়া রোগ বৃদ্ধি পাওয়া মুখের স্বাদ হারিয়ে যাওয়া এবং সব সময় নিজেকে দুর্বল মনে হওয়ার এই সবকিছুই কিডনি ড্যামেজ হওয়ার লক্ষণ।
তবে এখন আপনার মধ্যে হয়তো বা প্রশ্ন জাগতে পারে যে এই লক্ষণ গুলোতো একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের অন্য যেকোনো কারণেও হতে পারে। হ্যাঁ, হতে পারে তবে একটি কথা মনে রাখবেন এই ধরনের লক্ষণ যদি একনাগারে লাগাতার ভাবেই চলতে থাকে ভালো না হয় তাহলে আপনি নিশ্চিত হবেন যে কিডনিতে
যেকোনো ধরনের সমস্যা হয়েছে বা কিডনি ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে আপনার করনীয় হল অতি দ্রুত একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের স্বরণাপন্য হওয়া এবং ডাক্তারের নিয়ম অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া।
কিডনি রোগের প্রতিরোধ কিভাবে করবেন
আমাদের দৈনন্দিন কিছু অনিয়মিত ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যভ্যাসের কারণে আমরা অনেকেই খুব অল্প বয়সেই কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছি। শরীরকে কিডনি রোগের হাত থেকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই যেসব করনীয়তা ও নিয়ম নীতি রয়েছে তা মানা উচিত এর বাইরে চলে গেলে আপনি শুধু কিডনি রোগ নয় বরং অন্যান্য বড় বড় রোগে আক্রান্ত হতে পারেন এটাই স্বাভাবিক।
- একজন পূর্ণবয়স্ক ও সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক ৭ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। তবে কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির এর থেকে আরও বেশি পানি পান করতে হবে।
- প্রতিদিন বেশি বেশি শসা খাওয়া। কারণ শসাতে এমন কিছু এন্টিবায়োটিক গুণ রয়েছে যা কিডনিতে জমা পাথর বা কিডনির উপরে পড়া স্পটকে দূর করতে ম্যাজিকের মত কাজ করে।
- ধূমপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করা থেকে দূরে থাকতে। কারণ নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন শুধু কিডনি রোগের লক্ষণ ছড়ায় না বরং মরণঘাতী ক্যান্সারকোষ তৈরি হতে সহায়তা করে।
- শরীরের রক্তচাপ বেড়ে গেলে দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে হবে। দীর্ঘদিন যাবত উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে থাকলে কিডনি ড্যামেজ করে দেই।
কিডনি টেস্ট করতে কত টাকা খরচ হয়
আমাদের মাঝে অনেক মানুষ আছেন যারা কিডনি টেস্ট করতে কত টাকা খরচ হয় তা জানতে চান। মূলত কিডনি সুস্থ আছে কিনা তা দেখার জন্য প্রথম পর্যায়ে ব্লাড টেস্ট ইউরিন টেস্ট এবং কিডনির আল্ট্রাসনোগ্রাফি এই তিন ধরনের টেস্ট করাতে হয়। এই তিনটি টেস্ট করাতে সবকিছু মিলিয়ে সর্বোচ্চ
আরো পড়ুনঃদ্রুত ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়
১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা মতো খরচ হতে পারে এর বেশি নয়। তবে আপনি যদি সর্বোচ্চ ভালো হসপিটালে গিয়ে এই টেস্ট গুলো করান সে ক্ষেত্রে আপনার একটু বেশি টাকা খরচ হতে পারে।
কিডনি টেস্ট নাম লিস্ট
কিডনি সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে কিনা তা জানার জন্য মূলত বেশ কয়েকটি টেস্ট করাতে হয় এই টেস্ট গুলোর নাম আমি নিচে একটি টেবিলের মাধ্যমে তুলে ধরলাম আপনি এক নজরে দেখে নিতে পারেন।
ক্রমিক নং | কিডনি টেষ্টের নাম |
---|---|
১ | ব্লাড টেষ্ট |
২ | ইউরিন টেষ্ট |
৩ | কিডনি আল্ট্রাসনোগ্রাফি |
লেখক এর শেষ মন্তব্য
এতক্ষণ এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলে আমরা কিডনি ভালো আছে কিনা তা বোঝার উপায় কিডনি রোগের লক্ষণ প্রতিকার ইত্যাদি আরো অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। তবে আমি একটি কথা বলতে চাই মানবদেহে কিডনির কোন বিকল্প নেই কিডনি যদি একবার ড্যামেজ হয়ে যায় তাহলে তার থেকে
সুস্থতা লাভ করা অনেকটাই কষ্টদায়ক এমনকি এর ফলে মৃত্যু পথযাত্রী ও হতে পারেন। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে কিডনির প্রতি ও সর্ব শরীরের প্রতি যত্নশীল হওয়া আমাদের প্রত্যেকেরই কর্তব্য।
গ্রীনল্যান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url