জুমার দিনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আমল ও তার ফজিলত সম্পর্কে জানুন

জুমার দিনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আমল বা ইবাদত কি, এবং সেই আমল করলে কি পরিমাণে সওয়াব পাওয়া যায়। এবং জুমার দিনের ফজিলতপূর্ণ আমলগুলো কিভাবে করতে হয় আপনি কি তা জানতে চান? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই লেখা।

জুমার-দিনের-আমল ও-ফজিলত

প্রত্যেক সপ্তাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন অর্থাৎ সাপ্তাহিক জুমার দিনের ফজিলত গুরুত্ব ও তাৎপর্যতা এতই বিশাল যে কখনো আলোচনা করে শেষ করা যাবেনা। তবে জুমার দিনের বিশেষ বিশেষ আমলগুলো আজকের আর্টকেলে তুলে ধরা হল।

পেজ সুচিপত্রঃ

জুমার দিনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আমল ও তার ফজিলত

মহান আল্লাহ তা’আলা সপ্তাহের প্রত্যেকটি বার প্রত্যেকটি দিনকেই মুসলিম উম্মাহর জন্য ইবাদতের জন্য ও ফজিলতপূর্ণ করেছেন। তবে সেই দিনগুলোর মধ্যে সবথেকে ফজিলতপূর্ণ ও উত্তম দিন হচ্ছে শুক্রবার দিন অর্থাৎ সাপ্তাহিক জুমার দিন। এই দিনে আমল করার মাধ্যমে অফুরন্ত সওয়াব লাভ করা যায় এবং জুমার দিনের আমলের ফজিলত গুরুত্ব এবং তাৎপর্য এতই বিশাল যে, কোন লোক চক্ষু

সম্মুখে আলোচনা করে শেষ করা যাবে না বরং অনেক লম্বা সময় ধরে আলোচনা করতে হবে। তবে আপনি যদি সেই বিশেষ আমলগুলো সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি স্ক্রোল না করে অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। আমরা সাধারণত শুক্রবারকেই জুমার দিন বলে থাকি জুমার দিন প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য একটি ঈদের দিন বলা যায়। কারণ জুমার দিনে প্রত্যেক

আরো পড়ুনঃজান্নাতি ২০ জন সাহাবীর নাম - সবচেয়ে শ্রেষ্ট সাহাবীদের নামের তালিকা

মুসলমান মসজিদে একত্রিত হয়ে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে ঈদের মতোই আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। ইবাদতের দিক দিয়ে শুক্রবার একটি ফজিলতপূর্ণ ও উত্তম দিন। আবার এই দিনকে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল বিশেষভাবে ভয় করতে বলেছেন। বলা হয়েছে যখন তোমাদের মধ্যে শুক্রবার দিন উপস্থিত হয় তখন সেই দিনে তোমরা ভয়ে ভয়ে থাকো কেননা শুক্রবার দিনগুলোর মধ্যে

এমন এক শুক্রবার আসবে যে শুক্রবারে কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। শুক্রবারে আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করেছেন, এই দিনে তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন, এই দিনে তিনি হযরত আদম আলাইহিস সাল্লাম ও হাওয়া আলাইহিস সাল্লামকে জান্নাত থেকে বের করে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন, এই দিনেই আল্লাহ তাআলা হযরত আদম আলাইহিস সাল্লাম ও হযরত

হাওয়া আলাইহিস সালামকে দুনিয়াতে সাক্ষাৎ করিয়েছিলেন, এবং এই দিনেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে এ কথা কুরআন ও হাদিসে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কেয়ামতের ১৩১ টি ছোট আলামত এবং ১০টি বড় আলামত রয়েছে। আমরা এমন এক জামানায় আছি যেখানে আমরা সকলেই জানি যে এটি শেষ জামানা এরপরে আর কোন জামানা আসবে না এবং পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে আমরা সকলেই

মৃত্যুবরণ করে পুনরায় আল্লাহর কাছে ফেরত যাব। কেয়ামতের ১৩১ টি ছোট আলামত গুলোর মধ্যে ছোট ছোট অনেকগুলো আলামত প্রকাশ হয়ে গেছে কিন্তু আমরা তা অবলোকন করতে পারছি না। এর কারণ কি জানেন? এর একমাত্র কারণ হলো আমাদের ঈমান দৃঢ় নয় দুর্বল ঈমান। কেয়ামত যত নিকটবর্তী হবে মানুষদের পক্ষে ঈমান ধরে রাখা তত বেশি কঠিন হবে। আর ঈমান এমন একটি বিষয়

যা সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে বলা হয়েছে যে শেষ জামানার মানুষেরা আগুনের ফুলকি হাতে নিয়ে থাকতে পারবে কিন্তু ঈমান ধরে রাখতে পারবেনা। তাই আমাদের সকলকেই এসব বিষয়গুলো মাথায় রেখে আল্লাহর এবাদতে মগ্ন হওয়ার উচিত। কারণ আল্লাহ তা'আলা পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন তার একটিমাত্র উদ্দেশ্যে সেটি হলো পরিপূর্ণভাবে তার এবাদত করা। আমরা যখন রুহের জগতে ছিলাম

তখন শত শত বার আল্লাহকে রব স্বীকার করেছি অথবা আল্লাহ তাআলা আমাদের দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু আমরা দুনিয়াতে এসে আল্লাহকে এমন ভাবে ভুলে গিয়েছি যে করবে যে আমরা তাকে রব স্বীকার করেছিলাম তা আমাদের স্মরণে একবারও আসেনা এমনকি মৃত্যুকে একবারও স্মরণ করিনা যে সম্পর্কে বলা হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি

প্রতিদিন আল্লাহকে এবং নিজের মৃত্যুকে সত্তর বার স্মরণ করবে ঈমান অবশ্যই অবশ্যই শক্তিশালী হবে এবং তিনিই প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তি। কিন্তু আমরা ৭০ বার তো দূরের কথা এমনও ব্যাখ্যা আছে যারা দিনের মধ্যে একবারও স্মরণ করেন না। আমাদের সকলকে আল্লাহ তায়ালা তার ইবাদতের জন্য দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন এবং জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন আমাদের জন্যই।

এবং এটা বলে দিয়েছেন ভালো কাজ করলে জান্নাত আর খারাপ কাজ করলে জাহান্নাম অবধারিত এখন মানা না মানা আপনার ব্যাপার। তবে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন এখন আমরা জুমার দিনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আমল ও তার ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করি। আসলে সপ্তাহে সাত দিন আর সাত দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নামাজ হচ্ছে জুমার নামাজ

এবং জুমার দিনে বিশেষ পাঁচটি আমল রয়েছে যেগুলোর ফজিলত আমাদের জন্য জান্নাতের পথকে সুগম করে দিতে পারে। তাহলে চলুন এখন জেনে নিই সেই পাঁচটি বিশেষ আমল কি কি?

১. প্রথম আমলঃ

দরুদ পাঠ করাঃজুমার দিনের ইবাদত শুরু হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু করে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সদা সর্বদা সব সময় আমার সানে দরুদ পাঠ কর তবে জুমার দিনে বেশি দরুদ পাঠ কর। দরুদ পাঠ করার মানে রাসুল সাঃ এর জন্য দোয়া করা আর এতে সবচাইতে বেশি লাভ আমাদের।

আরো পড়ুনঃ313 জন শ্রেষ্ঠ সাহাবীর নাম - পুরুষ সাহাবীদের নামের তালিকা অর্থসহ

কারণ, আমরা যদি তার জন্য দোয়া করি তাহলে তিনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন এবং আমাদের জন্য শাফায়েতকারী হবেন। রাসুল সাঃ নিজেই বলেছেন যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পেশ করবে আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি ১০ বার রহমত নাযিল করবেন রহমত মানে আল্লাহর অনুগ্রহ। যদি একবার দরুদ পেশ করে দশবার আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা যায় তাহলে ১০০ বার দুরুদ পাঠ করলে

১০০০ বার আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা যাবে নিশ্চয়ই। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সান্নিধ্য হাসিলের জন্য এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের জন্য শুক্রবারের দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। এক্ষেত্রে যেকোনো দুরুদ পাঠ করা যায় তবে দুরুদে ইব্রাহিম পাঠ করলে সবচাইতে বেশি ভালো হয়।

২. দ্বিতীয় আমলঃ

ফজরের নামাজ আদায় করাঃজুমার নামাজ আদায়ের প্রস্তুতির জন্য জুমার দিনের ফজরের নামাজ জামায়াতের শহীত আদায় করা জুমার দিনের একটি বিশেষ আমল। দেখুন আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক ব্যক্তির উপরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন আর হাশরের ময়দানে সর্বপ্রথম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হিসাব নিবেন এ সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত। জুমার নামাজের জন্য

ফজরের নামাজ আদায় করা অনেক জরুরী কারণ ফজরের নামাজ আদায় না করলে জুমার নামাজ আদায় করে কোন লাভ নেই। শুধু ফজর নয় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই যদি আপনি আদায় না করেন তাহলে শুধু সপ্তাহে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়ে কি লাভ বলুন। তাই জুমার নামাজ আদায়ের জন্য সর্বপ্রথমে জুমার দিনে ফজরের নামাজ আদায় করতে হবে।

৩. তৃতীয় আমলঃ

জুমার দিনের বিশেষ আমল গুলোর মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ আমল হচ্ছে জুমার নামাজ আদায় করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায়ের জন্য আগে আগে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ জামাতের শহীত আদায় করে এবং সকল কাজকর্ম শেষ করে উত্তম রূপে গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করে খুশবু লাগিয়ে রাস্তার ডান দিক দিয়ে

মসজিদের দিকে গমন করেন এবং ইমামের খুব কাছাকাছি বসে মনোযোগ সহকারে ইমাম সাহেবের খুতবা শুনেন অতঃপর দু রাকাত জুমার নামাজ আদায় করেন। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি কদমে অর্থাৎ প্রতি ধাপে এক বছর রাত জেগে নফল নামাজ আদায় করা এবং এক বছর দিনে নফল রোজা রাখার সওয়াব দান করেন। তাছাড়া মসজিদে প্রবেশের পর আরো কিছু আদব রয়েছে যেমন-

রাসুল (সঃ) বলেন, যখন কোন ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদের মধ্যে প্রবেশ করে তখন সে যেন পেছন থেকে লোকদের ফেঁড়ে সামনের দিকে গিয়ে না বসে বরং যেখানেই জায়গা পাই সেখানেই সে যেন বসে যায় এমনকি যদি কেউ কথা বলে তখন তাকে কথা না বলার জন্য নিষেধ করেন। কেননা এই কাজ করলে উক্ত ব্যক্তিও কথা বলা ব্যক্তির সামিল হয়ে যাবেন।

৪. চতুর্থ আমলঃ

সূরাতুল কাহাফ ও সূরাতুল জুমা তেলাওয়াত করাঃআমরা এমন এক জামানায় বাস করছি যেখানে ফিতনা ফাসাদের কোন অন্ত নেই। জুমার দিন জুমার নামাজের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা। এক্ষেত্রে একটি হাদিস হলো

হযরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সেই ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলওয়াত করে তার জন্য দুই জুমা অর্থাৎ এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত এর মধ্যবর্তী সময়ে নূর প্রজ্বলিত হতে থাকে এবং ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন (সুনানুল বায়হাকি-আল কুবরা-হাদিস নম্বরঃ ৫৭৯২)। এবং সূরা জুমার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে,

আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ, যখন জুমার নামাজের জন্য মসজিদে আজান দেওয়া হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণার্থে সকল বেচাকেনা বন্ধ করে তার দিকে দ্রুত ছুটে যাও। এটা তোমাদের জন্য অধিক কল্যাণকর যদি তোমরা তা বুঝতে পারো। (সূরা জুমাঃ আয়াত নংঃ ৯)। তাছাড়া জুমার দিনে সূরাতুল কাহাফ ও সূরাতুল জুমা তেলাওয়াত করলে দারজালের ফেতনা ফাসাদ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে যা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন।

৫. পঞ্চম আমলঃ

দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্তঃরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুমার দিনে দোয়া কবুলের জন্য একটি বিশেষ মুহূর্ত বা সময় রয়েছে কিন্তু সেই সময় সম্পর্কে তিনি উল্লেখ করে দেননি। এর কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই ভালো জানেন। তবে বিভিন্ন হাদিস গবেষণাকারী ও অধিক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিরা বিভিন্ন আলোচনা পরীক্ষা ও

আরো পড়ুনঃসুমাইয়া নামের প্রকৃত অর্থ কি - সুমাইয়া নামের ইংরেজি বানান

নিরীক্ষার মাধ্যমে সেই বিশেষ সময় সম্পর্কে একটু ধারণা দিয়েছেন যে শুক্রবার দিন আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অর্থাৎ মাগরিব পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে যেকোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা'আলা তা ফিরিয়ে দেন না। তাই শুক্রবার দিন বিশেষ করে আসর নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত বেশি বেশি দোয়া ও আমল করা। এছাড়াও অন্যন্ন আরো অনেক

আমল রয়েছে যেমন জুমার দিন বেশি বেশি দার সদকা করা আত্মীস্বজন ও বিশ্ববাসির জন্য দোয়া করা, যদি পিতামাতা বেঁচে থাকেন তাহলে তাদের জন্য দোয়া করা আর যদি মৃত্যুবরণ করে থাকেন তাহলে তাদের কবর জিয়ারতকরা। জুমার দিন ফজর নামাজের প্রথম রাকাতে সুরা সিজদা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা দাহর তেলাওয়াত করা। এবং মাগরিবের নামাজে সুরা কাফিরুন ও

সুরা ইখলাস তেলাওয়াত করা ও এশার নামাজে সুরা জুমা ও সুরা মুনাফিকুন তেলাওয়াত করা। আর এশার নামাজের পরে ঘুমানোর আগে সুরা দুখান আয়াতুল কুরসি ও সুরা হাশরের তিন আয়াত পাঠ করা।

জুমার দিনের দরুদ শরীফ ও তার ফজিলত

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমরা জুমার দিনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আমল ও তার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম তবে এখন আমরা জুমার দিনের দরুদ শরীফ পাঠের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। জুমার দিনের বিশেষ পাঁচটি আমলের মধ্যে দরুদ শরীফ পাঠ করা একটি বিশেষ আমল যে সম্পর্কে উপরের অংশে আলোচনা করা হয়েছে তবে দরুদ শরীফ এর ফজিলত সম্পর্কে এই অংশে আরও

বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে যেন আপনি তা ভালোভাবে বুঝে সে অনুযায়ী আমল করতে পারেন। আসলে দুরুদ এমন একটি দোয়া যা পাঠ না করলে অন্যান্য দোয়া আল্লাহর দরবারে পৌঁছায় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন তখন সেই দোয়া আসমানে ঝুলন্ত অবস্থায় থেকে যায় আর ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে

পৌঁছায় না যতক্ষণ না দরুদ পাঠ করা হয়। দরুদ পাঠ করা মানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য দোয়া করা এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পেশ করবে আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি ১০ টি রহমত বর্ষণ করবেন। এক্ষেত্রে বোঝা যায় যে, আল্লাহর সান্নিধ্য আল্লাহর ভালোবাসা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে হলে প্রথমে তার প্রিয় হাবিবের সান্নিধ্য ভালোবাসা

ও সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। অতঃএব আমরা প্রতিদিনিই দরুদ পাঠ করব বিশেষ করে জুমার দিন বেশি বেশি পাঠ করব ইনশা-আল্লাহ। জুমার দিনে যে কোন দরুদ পড়া যায়। কিন্তু যারা বড় বড় দরুদগুলো পড়তে জানেন না তারা ছোট দরুদ পাঠ করতে পারেন যেমন শুধু (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাঠ করলেই হবে।তবে দুরুদে ইব্রাহিম সবচাইতে উত্তম দরুদ এবং এই দুরুদ পাঠ করলে ফজিলত বেশি পাওয়া যায়। দরুদে ইব্রাহিম হলো-

““আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’’’’

জুমার দিন যে আমল করলে দোয়া কবুল হয়

সাপ্তাহিক জুমার দিন ইবাদত ও দোয়া কবুলের একটি সর্বোত্তম দিন। এই দিনের ইবাদত ও আল্লাহর নিকট করা দোয়া আল্লাহ তায়ালা ফিরিয়ে দেন না তবে ইবাদত হতে হবে ইখলাসের সহিত এবং দোয়া করতে হবে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে যেন আল্লাহ তায়ালা তা দেখে সন্তুষ্টি হয়। জুমার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে যে আমলগুলো করলে

জুমার-দিন-যে-আমল-করলে-দোয়া-কবুল-হয়

আল্লাহর দরবারে যেকোনো দোয়া কবুল হয়ে যায়। আমলগুলো নিম্নরূপ-প্রথমে ফরজ গোসল উত্তম রূপে গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করে মসজিদে গিয়ে নীরবে ইমাম সাহেবের খুতবা শুনে দুই রাকাত জুমার নামাজ আদায় করার পর ছোট ছোট জিকির আজগার যেমন-

  • আস্তাগফিরুল্লাহ রাব্বি মিন কুল্লি জাম্বি ওয়া আতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিউল আজিম (৩ বার)
  • আস্তাগফিরুল্লাহ হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিউল আজিম (৩ বার)
  • সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার (৩ বার)
  • ইয়া হাইয়ুল ইয়া কাইয়ুম বিরাহমাতিকা আস্তাগিস (৩ বার)
  • লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ যোয়ালিমিন (৩ বার)
  • আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান্নার (৩ বার)
  • আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু আহাদান সামাদান লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ ওয়ালাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওন আহাদ (৩ বার)
  • লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মালিকুল হাক্কুল মুবিন (৩ বার)
  • লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলক অলা হুল হামদ ওহুয়া আলা কুল্লি শাইযয়িং কাদির (৩ বার)
  • সূরা ফাতিহা
  • দরুদে ইব্রাহিম বা অন্যান্য দরুদ (১ বার)
  • আয়াতুল কুরসি (১ বার)
  • সূরা হাশরের তিন আয়াত (১ বার)
  • সূরা ইখলাস (৩ বার)
  • সূরা ফালাক (৩ বার)
  • সূরা নাস (৩ বার)

অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে কিবলামুখী হয়ে বসে নম্রতা ভদ্রতা এবং বিনয়ী হয়ে সৎ উদ্দেশ্য অন্তরে রেখে দু হাত তুলে আল্লাহর নিকট দোয়া করলে সেই দোয়া কখনোই আল্লাহ তাআলা ফিরিয়ে দেন না।

জুমার দিনে যে আমল করলে ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়

এমন একটি বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে যে আমলটি সকলেই জানেন কিন্তু এর ফজিলত সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। এই গুরুত্বপূর্ণ আমলটি সদা সর্বদা সবসময় করা যায় তবে বিশেষ করে জুমার দিন যদি এই আমলটি করা যায় তাহলে আল্লাহ তাআলা ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেন এবং ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়ার আল্লাহ তাআলা বান্দার আমল নাময় যোগ করেন। আমলটি হলো-

““আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদানিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়ালা আলিহি ওয়া সাল্লিমু তাসলিমা’’’’

এমনকি হাদিসে উল্লেখিত আছে যে উক্ত দোয়াটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে স্বপ্নে দেখার দোয়া। যদি কোন ব্যক্তি এই দোয়াটি রাত্রে ঘুমানোর সময় পবিত্রতা অর্জন করে একশতবার এই দোয়াটি পাঠ করে ঘুমায় তাহলে ঐ রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বপ্নে দেখা দেন সুবহানাল্লাহ। কিন্তু আপনার কি মনে হয় শুধু

দোয়া পড়ে ঘুমিয়ে গেলেই কি স্বপ্নে প্রিয় নবীকে দেখা যাবে এটা কখনোই সম্ভব না। যদি আপনি সৎ, সত্যবাদী চরিত্রবান ন্যায়-নিষ্ঠাবান এবং ঈমানদার ব্যক্তি না হন তাহলে কখনোই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সান্নিধ্য লাভ করা সম্ভব নয়।

জুমার দিনের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে লেখক এর শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলে জুমার দিনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আমল ও তার ফজিলত, দরুদ শরীফ পাঠের ফজিলত এবং কিভাবে ও কোন দোয়া পড়লে ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায় উক্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে অনেক সুন্দরভাবে স্টেপ বাই স্টেপ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি জুমার দিনের আমল ও তার ফজিলত সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার

অনেক উপকারে আসবে ইনশাআল্লাহ। তবে শেষ কথায় একটি কথা বলতে চাই, জুমার দিনে উক্ত বিষয়গুলি মেনে বিনয়ের সঙ্গে আল্লাহর নিকট যদি দোয়া করতে পারেন তাহলে আল্লাহ তা'আলা আপনার দোয়া কবুল করে নিবেন এবং তার দরবার থেকে আপনার হাত ফিরিয়ে দিবেন না। আর এই আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ে আপনি যদি একটুও উপকার পেয়ে থাকেন তাহলে দয়া করে আর্টিকেলটি

আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন এবং এই ওয়েবসাইটের ফলো বাটনে ফলো দিয়ে আমাদের পাশে থাকতে পারে। আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত থেকে থাকে তাহলে নিচের কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করে জানাতে পারেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

গ্রীনল্যান আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url